# মিলাদ হোসেন অপু :-
ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শারমিন আক্তার (৩০) নামে এক গৃহবধূর মরদেহ ফেলে গেলেন স্বামী ফারুক মিয়া (৩৫)। আজ ১৬ নভেম্বর রোববার সকাল ১০টায় গুরুত্বর অসুস্থ্য অবস্থায় শারমিন আক্তারকে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসে ভর্তি করে স্বজনরা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শারমিন আক্তারের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর খবর শুনে মরদেহ হাসপাতালে ফেলে পালিয়ে যায় স্বামী ফারুক মিয়াসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভৈরব থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ভৈরব থানার এসআই চৌধুরী তাসীন চামেল।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রোববার সকাল ১০টায় অসুস্থ অবস্থায় গৃহবধূ শারমিন আক্তারকে তাঁর স্বামী ও শাশুরি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। কর্তব্যরত ডাক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অবস্থার অবণতি দেখলে গৃহবধূর পরিবারকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অথবা কিশোরগঞ্জের সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন। পরে পরিবার গৃহবধূকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে অ্যাম্বুলেন্স আনতে গেলে হাসপাতালে গৃহবধূর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর খবরে প্রথমে স্বামী পালিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর শাশুড়ীও চিৎকার চেঁচামেচি করে হাসপাতাল থেকে সটকে পড়ে। পুলিশ এসে কাউকে খুঁজে পায়নি।
এদিকে নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, নিহত শারমিন আক্তার নরসিংদীর রায়পুরা জেলার চাঁনপুর ইউনিয়নের বগদরকান্দি গ্রামের রবিউল্লাহ মিয়ার মেয়ে। নিহতের শ্বশুরের নাম সুরুজ মিয়া। তারা একই গ্রামের বাসিন্দা।
নিহত গৃহবধূর চাচা আব্দুর রহিম মিয়া বলেন, ১৪ বছরের সংসারে আমার ভাতিজি কোন দিন তাঁর শ্বশুর শাশুড়ির অত্যাচারে ভালো থাকতে পারেনি। তাঁর স্বামী দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলো। তাদের সংসারে ফারজানা নামে ১১ বছরের একটি কন্যা সন্তান ও সালমান নামে ৮ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। যতটুকু জানতে পেরেছি শ্বশুর শাশুড়ির কলহের জেরে সকালে ঝগড়া করে আমার ভাতিজি বিষ পান করেছে।
স্ত্রীর মৃত্যুর জন্য নিজের মা-বাবাকে দায়ী করে নিহতের স্বামী ফারুক মিয়া বলেন, শনিবার থেকে আমার স্ত্রীর সাথে আমার মায়ের পারিবারিক বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়েছিল। রোববার সকালেও মায়ের সাথে আমার স্ত্রীর ঝগড়া হয়। ঝগড়ার পর আমার স্ত্রী অসুস্থ্যবোধ করলে আমি তাকে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি। হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমার স্ত্রী মৃত্যুবরণ করে।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. রেজিনা পারভিন বলেন, সকালে নরসিংদীর রায়পুরা থেকে অসুস্থ্য অবস্থায় শারমিন নামে এক গৃহবধূকে হাসপাতালে নিয়ে আসে তার স্বজনরা। যতটুকু জেনেছি ওই গৃহবধু ধানের পোকা মারার ঔষুধ খেয়েছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেই। এসময় শারমিনের পরিবার অ্যাম্বুলেন্স আনতে গেলে পরক্ষণেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গৃহবধূ শারমিন মারা যায়। মারা যাওয়ার পর তাঁর পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে আমরা থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে তাদের তত্ত্বাবধানে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে ভৈরব থানার এসআই চৌধুরী তাসীন চামেল বলেন, খবর পেয়ে আমরা হাসপাতালে আসি। এখানে এসে নিহত গৃহবধূর পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে মুঠোফোনে নিহতের স্বজনদের সাথে কথা হয়েছে। মরদেহ হাসপাতাল থেকে থানায় এনে ময়না তদন্তের জন্য লাশ কিশোরগঞ্জ মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে ঘটনাটি রায়পুরা থানা এলাকায়। স্বজনদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।