কিশোরগঞ্জে মা ও শিশু স্বাস্থ্য, প্রজনন, সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর যৌন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে অগ্রাধিকার ও স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে লৈঙ্গিক সমতা বিধান বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিভিল সার্জন ডা. মো. মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে আজ ৩০ সেপ্টেম্বর বুধবার সকালে শহরের ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউ.এন.এফ.পি.এ কর্মকর্তা ডা. সাদিয়া জাহান। এর ওপর বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মাসুদ আনোয়ার, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অর্ণব দত্ত, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক আবু তাহা মো. এনামুর রহমান, শিশু বিভাগের কনসাল্ট্যন্ট ডা. সুবীর নন্দী, গাইনি কনসাল্ট্যান্ড ডা. নাঈমা আফরোজ, জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোস্তফা কামাল, জেলা ব্র্যাক সমন্বয়ক মো. শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
সভায় বলা হয়, আমাদের দেশে অনেক নারী নানারকম যৌন ও প্রজনন সমস্যা নিয়ে ভুগছেন। শিশুদেরও অপুষ্টিসহ নানা রকম শারীরিক সমস্যা রয়েছে। প্রসবকালীন জটিলতা এবং অপুষ্টির কারণে বহু জটিলতা মোকাবেল করতে হচ্ছে। বাল্যবিয়ে রোধ করতে পারলে মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য অনেকাংশে সুরক্ষিত হবে বলে বিভিন্ন বক্তার আলোচনায় উঠে এসেছে। এছাড়া বর্তমান কোভিড পরিস্থিতির কারণে ননকোভিড চিকিৎসা সেবায় কিছুটা ব্যত্যয় ঘটার জন্যও নানারকম সমস্যা দেখা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন সূচকের পরিসংখ্যান তৈরি করাটাও দুষ্কর হয়ে পড়েছে বলে সভায় উল্লেখ করা হয়। এই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটিয়ে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। সভায় বলা হয়, উপজেলা পর্যায়ে এ ধরনের চিকিৎসা সেবায় নানারকম লজিস্টিক সুবিধার ঘাটতি রয়েছে। এসব সমস্যা চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রসারিত যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার নিয়ে কাজ চলছে। মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার হাস করা এই কার্যক্রমের অন্যতম লক্ষ্য। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বিভিন্ন রোগে যাত নারী মারা যায়, এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে জরায়ু ক্যান্সার। এছাড়া ফিশ্চুলাও একটি বড় সমস্যা। বর্তমানে বিনামূল্যে ফিশ্চুলার চিকিৎসা হচ্ছে বলেও প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়। নারীদের বিভিন্ন যৌন ও প্রজনন সংক্রান্ত জটিল রোগ মোকাবেলা করার জন্য বাল্যবিয়ে রোধ করা এবং পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম জোরদার করার ওপর অনেক বক্তাই গুরুত্বারোপ করেছেন। এছাড়া স্কুল পর্যায়ে প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে পাঠদানেরও দাবি জানানো হয়েছে।
সিভিল সার্জন বলেছেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রেও জরায়ু ক্যান্সার শনাক্তকরণ পরীক্ষা করা সম্ভব। কিছুদিন পর পরই এই পরীক্ষাটা করানো উচিত বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, জরায়ু ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করে চিকিৎসা করাতে পারলে শতভাগ আরোগ্য সম্ভব। তিনি বাল্যবিয়ের কারণেও প্রসূতিসহ নারীদের নানারকম জটিল রোগ বেশি হয়ে থাকে উল্লেখ করে বলেন, দেশে শতকরা ৪৫ ভাগ বিয়ে হয় বাল্যবিয়ে। কাজেই বাল্যবিয়ে রোধ করার ওপর এসব রোগ থেকে মুক্ত থাকা অনেকাংশে নির্ভর করছে। উপজেলা পর্যায়ে নিরাপদ ডেলিভারী সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়ে চেষ্টা চলছে বলেও সিভিল সার্জন উল্লেখ করেছেন।