# নিজস্ব প্রতিবেদক :-
কিশোরগঞ্জে ভূমি সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে, এ জেলায় সর্বশেষ ভূমি জরিপ হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। চূড়ান্ত আরএস (রিভিশনাল সার্ভে) রেকর্ড বা মাঠপর্চা প্রস্তুত হয় ২০০৮ সালে। এসময় বহু ভুলভ্রান্তি হয়েছে। আর এই ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে মানুষকে। ভুল সংশোধন করতে কিশোরগঞ্জে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনাল গঠিত হয় ২০১৩ সালে। এরপর ট্রাইবুনালে প্রায় ৬০ হাজার মামলা হয়। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে প্রায় ২০ হাজার মামলা। এখনও ৪০ হাজার মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ঝুলছে বলে জানিয়েছেন জেলা বারের সাবেক সভাপতি ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন।
তিনি বলেন, যেসব মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে, এর বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ পক্ষ আপীল করতে চাইলেও পারছেন না। কারণ সরকার হাইকোর্ট বেঞ্চে এসব মামলার আপীলের আইন করলেও এখনও এ সংজক্রান্ত কোন বেঞ্চ গঠিত হয়নি। যে কারণে ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা থেকেই যাচ্ছে। সংক্ষুব্ধ পক্ষ কোন প্রতিকারের উদ্যোগ নিতে পারছে না।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নুরুজ্জামানের সভাপতিত্বে সোমবার দুপুরে কালেক্টরেট সম্মেলন কক্ষে ২২ থেকে ২৮ মে পর্যন্ত ভূমি সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। এসময় ‘স্মার্ট ভূমিসেবায় ভূমি মন্ত্রণালয়’ প্রতিপাদ্যের ওপর অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মো. হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. নূরে আলম, জেলা রেজিস্ট্রার মো. আবু তালেব, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর সুলতানা রাজিয়া, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো. আসাদ উল্লাহ, সরকারী গুরুদয়াল কলেজের শিক্ষক যুবায়ের আহমেদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশে যতরকম ফৌজদারি অপরাধ বা খুনখারাবি সংঘটিত হয়, এর অন্তত ৭০ ভাগ ঘটে জমি সংক্রান্ত বিরোধের কারণে। দলিল হারিয়ে যাওয়া, দলিলের অস্পষ্টতা, রেকর্ড জালিয়াতিসহ নানা কারণে এসব খুনখারাবির ঘটনা ঘটে। এখন ডিজিটাল ভূমি সেবার কারণে এসব বিরোধ অনেক কমে আসছে। ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন অফিসের দুর্নীতিও কমে আসছে বলে বিভিন্ন বক্তা মন্তব্য করেছেন। সরকার সহজে ভূমি সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে বা এসব বিষয়ে পরামর্শ নেওয়ার ক্ষেত্রে ‘১৬১২২’ হেল্প লাইন চালু করেছে। ক্রমান্বয়ে জমি খারিজের বিষয়টিও সহজ করা হচ্ছে। কেউ জমি কিনলে আর খারিজের জন্য আলাদা আবেদন করতে হবে না। এসি ল্যান্ড অফিস নিজে থেকেই খারিজ করে দেবে বলে অনুষ্ঠানে কর্মকর্তাগণ জানিয়েছেন। সভায় বিভিন্ন দলিল লেখকদের ফি সম্পর্কে সাবরেজিস্ট্রার অফিসের দৃশ্যমান জায়গায় সিটিজেন চার্টার ঝুলিয়ে রাখার জন্যও কেউ কেউ দাবি জানিয়েছেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেছেন, জেলায় ৬০ হাজার মামলা হয়ে থাকলেও সেটা তেমন বেশি নয়। জেলায় মোট ১৫ লাখ খতিয়ান রয়েছে। সেই দিক থেকে দেখলে মামলার সংখ্যা খুবই কম, শতকরা মাত্র ৪ ভাগ।
আলোচনা শেষে আশ্রয়ণের ঘর পাওয়াসহ কয়েকজন সেবা গ্রহিতার মাঝে জমির দাখিলা এবং খারিজের কাগজ বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। এরপর তিনি কালেক্টরেট ভবন প্রাঙ্গনে বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে ভূমি সেবা সপ্তাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন।