• শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ০৩:৪২ অপরাহ্ন |
  • English Version
শিরোনাম :
ভৈরবে নিরাপদ সড়ক চাই নিসচা ভৈরব শাখার পরিচয় পত্র বিতরণ ও মতবিনিময় অনুষ্ঠিত পাকুন্দিয়ায় নির্বাচনে ফলাফল কারচুপির অভিযোগ, ভোট পুনঃগণনার দাবি রেনু’র জাতীয় প্রেসক্লাবে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি কুলিয়ারচরে জিসি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৫৫ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ স্কুল ছাত্র খুনের আসামি র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার ঝড়ে বিভ্রাট লোডশেডিং কমে গেছে অটোরিকশা প্রতিটি ভোট কেন্দ্রই ফাঁকা দেখা গেছে আপডেট নিউজ ; ভৈরবে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ও বাজারের আধিপত্য নিয়ে দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত শতাধিক ভৈরবে জাইকার উদ্যোগে ড্রেন নির্মাণ কুলিয়ারচরে দ্বিতীয় ধাপে বেসিক কম্পিউটার ও সাইবার নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

ভৈরবে মাসব্যাপি ১ হাজার মানুষের জন্য উন্মুক্ত ইফতার আয়োজন

# মিলাদ হোসেন অপু :-
ভৈরবে পৃথক দুটি স্থানে মাসব্যাপি ১ হাজার মানুষের জন্য উন্মুক্ত ইফতারের আয়োজন করেছে প্রবাসী এক যুবক। তিনি হচ্ছেন ভৈরব পৌর শহরের ভৈরবপুর এলাকার রফিকুল ইসলাম সোহেল। পৌর শহরের মাতৃসদন মাঠে ও পৌর বাসস্ট্যান্ড ফল বাজার এলাকায় রোজার শুরু থেকে এই আয়োজন করা হয়েছে। ১২ মার্চ সোমবার দোয়া মাহফিল শেষে পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আতিক আহমেদ সৌরভ পৌর মাতৃসদনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মাসব্যাপি ইফতার কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. দ্বীন ইসলাম মিয়া, এমবিশন পাবলিক স্কুল পরিচালক ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন, ২নং ওয়ার্ড যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক সেন্টু মিয়া প্রমুখ।
জানা যায়, সকল শ্রেণি-পেশার লোকজন এখানে বিনামূল্য ইফতারি খেতে পারে। ধনী গরিব সব মানুষের জন্য উন্মুক্ত এই ইফতার আয়োজন। স্থানীয়দের সহযোগীতায় প্রতিদিন দুই স্থানে ১ হাজার মানুষের ইফতার আয়োজন করছেন বলে জানিয়েছেন সোহেল।
তিনি বলেন, আমি কাতারে যখন ছিলাম তখন দেখেছি তারা কিভাবে মানুষদের ইফতার করায়। তখন থেকেই আমি স্বপ্ন দেখি আল্লাহ আমাকে তৌফিক দিলে আমিও সবাইকে নিয়ে ইফতার করবো। আমি আমার সামর্থ অনুযায়ী সর্বস্তরের মানুষের জন্য ইফতার আয়োজন করছি। রোজাদারদের খাবার খাওয়ানো ভাগ্যের ব্যাপার। দীর্ঘ চার বছর যাবত এ আয়োজন করে আসছি। প্রথমে ৩শ জনের জন্য ইফতার দিয়ে আয়োজন শুরু করেছিলাম। গতবছর ৫শ মানুষকে নিয়মিত ইফতার করিয়েছি। আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে প্রতিবছর এ আয়োজন করে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। এতে প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। এই টাকা আমরা নিজেরাই বহন করি। আমাদের কোন সংগঠন না থাকলেও অনেকেই আমাদের বিভিন্ন ভাবে সহযোগীতা করে। তবে, শুধু নিম্নআয়ের মানুষই নয় সবার জন্যই এটি উন্মুক্ত। যে কেউ এসে এখানে ইফতার করতে পারবেন।
এ বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, সকলের সহযোগীতায় সোহেলের উদ্যোগে মাসব্যাপি ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। ইফতারে খেজুর, শরবত, বিভিন্ন ফল, পোলাও, ডিম ও খিচুরি-মাংসসহ বেশ কয়েকটি আইটেম প্রতিদিন দেয়া হয়। একেক দিন একেক ধরণের খাবার দেয়া হয়। রমজান মাসে অনেকেই অসহায়, গরিব ও দুস্থ মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকে। কিন্তু পথচারী অনেকে সময়মত ইফতার করতে পারে না। ভাল করে ইফতার করার সুযোগও থাকে না। অনেক অসহায় মানুষ আছে যারা সারাদিন রোজা রেখে ভাল খাবার খেতে পারে না। অনেক রিকশা চালক, ভ্যান চালক রোজা রেখে ক্লান্তি শরীরে সময়মত ইফতার করতে পারে না। দিনমজুর, ভিক্ষুকসহ অসহায় মানুষদের জন্য মূলত এই আয়োজন। সীমিত আয়ের মানুষের জন্য এই আয়োজন অত্যন্ত আনন্দের। এটি স্থানীয়দের অনেক ভালো লাগার কাজ। মাগরিবের আজান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের ভিড় লেগে যায়। সমাজের বিত্তবানরা চাইলেই সহযোগীতার হাত বাড়াতে পারে। তাতে আয়োজকদের কোন আপত্তি নেই।
সরেজমিনে আছরের নামাজের পর পৌর মাতৃসদনে গিয়ে দেখা যায়, দুইজন বাবুর্চি ইফতারের জন্য রান্না শেষ করে পরিবেশনের অপেক্ষায় রয়েছেন। এদিকে ইফতার করার জন্য সারিবদ্ধভাবে লোকজন আসছেন এবং বসছেন। এখানে রয়েছে দিন মজুর, পথচারি, স্কুল-কলেজের ছাত্র, কেউ ব্যবসায়ী, আবার অনেকেই ভ্যানচালক, রিকশাচালক, ভিক্ষুক, অসহায় এবং দরিদ্র শ্রেণির মানুষ।
এ বিষয়ে বাবুর্চি মাইন উদ্দিন বলেন, সোহেল ভাই প্রতিবছর ইফতার আয়োজন করেন। আমি দুই বছর যাবত রান্না করছি। আমি অনেক আনন্দ পায়। টাকাও হিসেব করে চাই না। যত দেয় ততই মজুরি নেয়। আমি সোহেল ভাইয়ের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করছি।
এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবী সাহিদ মিয়া বলেন, শুরু থেকেই আমরা সোহেলের সাথে রয়েছি। আমরা ৪০ জন স্বেচ্ছাসেবী বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করছি। এখানে সব শ্রেণি পেশার মানুষ ইফতার খেতে আসে। আমরা অনেক আনন্দিত।
এ বিষয়ে কথা হয় শরীফা বেগম, রিনা বেগম ও কুলসুম বেগম নামে ভিক্ষুকদের সাথে। তারা বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন স্থানে ভিক্ষা করে খাই। আমরা খুব গরিব মানুষ। দুমুঠো ভাত ঠিকমতো খেতে পারি না। এখানে এসে খায় মনটা ভরে যায়। এক বেলা খাবার খেলে আরেক বেলা উপোস থাকি। আমরা এখানে রোজার প্রথম দিন থেকেই ইফতার করছি। দোয়া করি তারা যেন নিয়মিত এ আয়োজন করে যেতে পারে।
অটো চালক কালাম বলেন, আমাদের মতো অনেক অসহায় এবং গরিব লোক এখানে ইফতার করে। গরিব লোকদের জন্য এমন আয়োজন সত্যিই প্রশংসনীয়।
সেখানে ইফতার করার সময় কথা হয় ভ্যান চালক মো. আবু কালামের সাথে। তিনি বলেন, আমি সারাদিন ভ্যান চালাই। ভ্যান চালিয়ে আমার সংসার চালাতে কষ্ট হয়। তারপর ইফতার করতেও টাকা লাগে। এখানে নিয়মিত ইফতার করি। কিছু টাকাও বেঁচে যায় আমার অনেক উপকার হয়।
এসময় কথা হয় জুটমেইল কর্মচারী কাউসার মিয়ার সাথে তিনি বলেন, জিনিস পত্রের যে দাম। এ অবস্থায় আমার ইফতার কিনে খাওয়ার মতো সামর্থ নেই। আমি ইফতার করার জন্য বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। মাতৃসদনে বিনা পয়সার ইফতার দেখে আমি এখানে এসে ইফতার করলাম।
কথা হয় কয়েকজন পথচারীর সাথে তারা জানান, আজ আমরা এখানে ইফতার করছি। তাদের এ উদ্যোগটি আমাদের অনেক ভালো লেগেছে। আমরা কর্তৃপক্ষদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। আমরা একা নয় অনেকেই এখানে ইফতার করেছেন। তবে এখানে ভিক্ষুক ও গরিব অসহায় মানুষের সংখ্যা বেশি। রোজাদারদের জন্য রয়েছে বহু আইটেমের ইফতার সামগ্রী।
এ ব্যাপারে ভৈরব পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. দ্বীন ইসলাম মিয়া বলেন, মানুষের টাকা থাকলেও গরিবদের খাওয়ানোর সাহস থাকে না। সোহেল একটি সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। আমি তাকে সাধুবাদ জানাই। অনেকেই আছে ইফতার করতে পারবেন না ভেবে রোজাই রাখেন না। আবার কেউ কেউ আছেন রোজা রেখে ভালো ইফতার করতে পারেন না। অন্যদিকে অনেক পথচারী রয়েছে যারা কাজের জন্য রাস্তায় আটকে যান তারাও সময় মতো ইফতার করতে পারেন না। এসব বিষয় চিন্তা করেই স্থানীয়রা সোহেলের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিনামূল্যে গরিব ও অসহায় থেকে শুরু করে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য বিনামূল্যে সবার জন্য ফ্রি ইফতারের আয়োজন করছে।
এ বিষয়ে পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আতিক আহমেদ সৌরভ বলেন, চার বছর যাবত এলাকার ছোট ভাই সোহেল সব শ্রেণির মানুষদের এজন্য এ আয়োজন করে যাচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *