কিশোরগঞ্জের হাওর বেষ্টিত অষ্টগ্রাম উপজেলার হাওর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর এই বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির শিক্ষার্থী সারাফ ওয়াফি আরিশা। সে অষ্টগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও এর কন্যা। তাকে এই বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে অনন্য নজীর স্থাপন করেছেন অষ্টগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মো. হারুন-অর-রশিদ। হাওর বেষ্টিত এই এলাকার অধিকাংশ কর্মকর্তারা নিজ পরিবারকে সাথে না রেখে শহরে বা অন্য কোথাও রাখে শুধুমাত্র সন্তানদের পড়াশোনার জন্য। অথচ অষ্টগ্রামে ইউএনও হারুন যোগদানের পর থেকেই পরিবারসহ অষ্টগ্রামে বসবাস করছে। সেই সাথে নিজ সন্তানকে ভর্তি করেছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
এবিষয়ে সরেজমিনে হাওর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে বেশ সাবলীলভাবে মিশে পড়াশোনা করছে ইউএনও তনয়া আরিশা। তার ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আছমা রহমান জানান যে, সে খুবই মিশুক ও মেধাবী। সেই সাথে সে ভাল ছবি একে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেয়েছে। কথা হয় সারাফ ওয়াফি আরিশার সাথে সে বলেন, এই স্কুলের ম্যাডামেরা তাকে খুব আদর করেন এবং এই স্কুলে তার বেশ কয়েক জন বান্ধবী হয়েছে। শহর বাদ দিয়ে অষ্টগ্রামে এসে নিজ মেয়েকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করেছেন জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ হারুন অর- রশিদ বলেন, “আমি নিজে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েছি, আমার মা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ছিলেন। কাজেই আমি মনে করি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানই উত্তম। তাছাড়া প্রাথমিকের কারিকুলামও এখন আন্তর্জাতিক মানের।”
এদিকে ইউএনও”র” কন্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে একটা ভাল উৎসাহ কাজ করছে এবং হাওর এলাকায় শিক্ষার মান আরো বাড়বে বলে সচেতন মহলের। এলাকাবাসীরা জানান, ইউএনও নিজেই মাঝে মাঝে চলে যান বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা দেখতে। তখন তিনি বাচ্চাদের সাথে মতবিনিময় করেন। মাঝে মাঝে বাচ্চাদের পড়ানোর কাজও করে তিনি। দেশের প্রতিটি ইউএনওর পরিবার যদি নিজ নিজ কর্মস্থলে পরিবারসহ বসবাস করে ও সন্তানদের স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে, তাহলে দেশের সামগ্রিক প্রাথমিক শিক্ষার বৈপ্লবিক পরিবর্তন হতো।