• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৩:১৩ অপরাহ্ন |
  • English Version
শিরোনাম :

কিশোরগঞ্জে ব্যবসায়ী হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন, ঘাতক মসজিদের মোয়াজ্জিন জাকির গ্রেপ্তার

কিশোরগঞ্জে ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিন চাঞ্চল্যকর ও ক্লু-লেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে লক্ষ্মীপুরের রামগতি থেকে আত্মগোপনে থাকা মসজিদের মোয়াজ্জিন জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে গরু ব্যবসায়ীর ছয় লাখ টাকা আত্মসাৎ করতে তাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। গতকাল দুপুরে র‌্যাব সদর দপ্তর থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
র‌্যাব জানায়, গত ৩ অক্টোবর সকাল ৬টার দিকে কিশোরগঞ্জ মডেল থানার কাটাবাড়িয়া ডাউকিয়া মসজিদের দক্ষিণ পাশে অচেতন অবস্থায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করলে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ওই ব্যক্তি মারা যান। তার পাঞ্জাবির পকেটে থাকা কাগজপত্র দেখে তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়। তার নাম রমিজ উদ্দিন। বয়স ৬৫ বছর। নরসিংদীর মনোহরদীতে তার বাড়ি।
উক্ত ঘটনায় রমিজ উদ্দিনের ছেলে বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করেন। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৪ টিম ছায়া তদন্ত শুরু করেন। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব সদস্যরা গত মঙ্গলবার রাতে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতির একটি মসজিদে চিল্লারত (তাবলিগ) অবস্থায় নৃশংস এ হত্যকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার থাকার অভিযোগে মোয়াজ্জিন জাকির হোসেনকে (৩৬) গ্রেপ্তার করে। তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার কমলাকান্দার জিগতলা লেংগুড়া এলাকায়। তার পিতার নাম আব্দুল আউয়াল।
গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্ত জাকির জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে বলেছে, সে গত ৫ বছর ধরে নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার একটি গ্রামের মসজিদে মোয়াজ্জিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। ওই এলাকায় ব্যবসায়ী রমিজন উদ্দিন ছিল একজন উঠতি ব্যবসায়ী। তার অর্থ আত্মসাৎ করতে গ্রেপ্তারকৃত মোয়াজ্জিন পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
নিহত রমিজ উদ্দিন যেহেতু গরু ব্যবসায় জড়িত এবং খামার প্রতিষ্ঠা করছে। তাই কম মূল্যে গরু কিনতে তাকে প্রভাবিত করে। গ্রেপ্তারকৃত জাকিরের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার সীমান্তবর্তী গ্রামে। সেখানে কমমূল্যে গরু পাওয়া যায়। মোয়াজ্জিন জাকির কমদামে গরু কেনাবেচায় বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য ঘটনার ১০ থেকে ১২ দিন আগে রমিজ উদ্দিনকে নিয়ে গরু বেচাকেনার স্থানে গিয়ে ছিল। এতে ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিন (ভিকটিম) আশ্বস্ত হয়।
পরবর্তীতে গত ৩০ সেপ্টম্বর ব্যাংক থেকে ৬ লাখ টাকা উত্তোলন করে। ২ অক্টোবর রাতে ব্যবসায়ীকে নিয়ে প্রথমে মনোহরদী থেকে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি ও পরে বড়পুল এলাকায় যায়। এরপর রিকশায় ঘটনাস্থলের কাছে কাটাবাড়িয়া ডাউকিয়া মসজিদ এলাকায় যায়। নির্জন এলাকায় অবস্থান নেয়। জাকির ব্যবসায়ীকে জানায়, ট্রাক বা অন্য গাড়িযোগে গরু ওই স্থানে পৌঁছে দেয়া হবে। এরপর তারা সেখানে দীর্ঘক্ষণ অবস্থান নেয়। রাত দেড়টার দিকে ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিনকে স্থানীয় ডাউরিয়া মসজিদের দক্ষিণ পাশে কলাবাগানে নিয়ে যায়। এরপর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবসায়ীর মাথায় হাতুড়ি দিয়ে পেছন থেকে আঘাত করে। হাতুড়ির আঘাতে রমিজ উদ্দিন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এরপর তার কপাল, মুখ ও বাম চোখের ওপর ও নিচে আঘাত করে। এরপর ব্যবসায়ী অচেতন হয়ে গেলে তার মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে ওই স্থানে লাশ ফেলে পালিয়ে যায়।
অভিযুক্ত ঘটনার দুই মাস আগে ওই ব্যবসায়ীকে হত্যা ও তার টাকা লুটের পরিকল্পনা করে। হত্যার আগে হাতুড়ি কিনে একটি ব্যাগে রাখে। আর লুটকৃত টাকার মধ্যে এক লাখ টাকা খরচ করছে। অন্য টাকা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে জমা রাখছে।

হত্যাকাণ্ডের পর সে কিশোরগঞ্জ থেকে মনোহরদী চলে যায়। সেখানে নিজ বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ফজরের আজানের সময় হলে মসজিদে গিয়ে আজান দেয় ও নামাজে অংশগ্রহণ করে। পরে সকালে মোক্তবে ২০ জন ছাত্রকে পড়ায়। হত্যাকারী মোয়াজ্জিনের ধারণা ছিল রমিজ উদ্দিনের মৃত্যুর কথা কেউ জানতে পারবে না। তাই সে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে থাকে।
গত ৩ অক্টোবর সকালে ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিনের মৃত্যুর খবর এলাবাসী জেনে যায়। এরপর জাকির ভয়ে মসজিদ থেকে ছুটি নিয়ে আত্মগোপনে নরসিংদীর মাধবদী, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, ময়মনসিংহ সদর, সিলেট জেলার ফেঞ্জুগঞ্জ মসজিদে যায়। সেখান থেকে তাবলিগের চিল্লায় লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে গিয়ে আত্মগোপন করে। সেখান থেকে র‌্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *